কবিতালেখা

 কবিতালেখা


নিখিলবিশ্বাস

বাংলাদেশের জল হাওয়া এমন
কবিতা সেখানে ফলতেই থাকে
শস্য বা আগাছা যখন যেমন ৷
স্বভাব কবি অযত্নে বেড়ে ওঠে
পরিচর্যা পেলে কখনও হয়ে ওঠে সত্যিকার বড় কবি ৷
পরিশ্রম চেষ্টা ছাড়া কোন মহৎ কাজ হয়নি কখনও
যতই প্রতিভা থাক এর  নেই অন্য বিকল্প ৷

অনেকেই আছেন রোজ কবিতা লেখেন
কতগুলো শব্দ এলোমেলো সাজিয়ে দিয়েই ভাবেন
বেশ কবিতা হয়েছে, .মাউসে ক্লিক করে
এইবার ডটকমের আকাশে একে দাও ছুঁড়ে ৷
তারপরেই সুরু করেন পরবর্তী কবিতা
রোজ দুটো কি তিনটে অবশ্যই লেখা চাই ।
তাতে না ছন্দ না কোন ভাষার বুনট ৷
কেউ লেখে মনষামঙ্গল কেউ চৈতন্য চরিত
কেউ লেখে চর্যাপদ ভীষণ গম্ধীর ।
শব্দের ও প্রাণ আছে তাকে সমীহ করো
তাকে দাও যথার্থ সন্মান ৷

আধুনিক কবি কিছু এলোমেলো শব্দ নিয়ে
ভাঙা চোড়া লোফালুফি করতে করতে
কিছু রূপক কিছু চিত্রকল্প গেঁথে দেন
কিছু চমকায় কবিতায়
কিছু থেকে যায় কবির মাথায় ।
কখনও সার্থক হয় কখনও কিম্ভূত ৷
তার একটাই চেষ্টা কি করে ঢাকবে তাকে,
কবিতার অবয়ব,জীবন যৌবন
যেন প্রকাশ্যে না আসে ।

পাঠকের মনে যদি কোন ছবি না ফোটে
না আসে কোন ভাবের প্রকাশ
তবে সে কবিতা সার্থক নয়; ব্যর্থ প্রয়াস ৷

Comments

  1. ওসামা বিন লাদেন ।
    - নিখিল বিশ্বাস ।

    ওসামা বিন লাদেন ।

    মানব সভ্যতার কলঙ্ক ওসামা বিন লাদেন
    তার খবর দিলে পঞ্চাশ লক্ষ্য ডলার ;
    পশ্চিমবঙ্গের নেতারা তাই
    মিছিল করে কাদেঁন ।
    লাদেন করেনি কোন অন্যায়
    তার নেই হাত কোন হামলায়
    সে ত শিশুর মতোই নিষ্পাপ
    চোখে আর মুখে
    সাক্ষাৎ যীশুরই ছাপ ।

    সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা
    করে শুধু দাদাগিরি
    সমস্ত পৃথিবী জানে ।
    আফগান তারা ধর্মটা খুব মানেন
    অন্যায় কিছুই নেই
    আশ্রয় পেয়েছে লাদেন ।
    ড্রোণ ,বিমানে বোম পড়ছে শহরে গ্রামে গঞ্জে
    নিরীহ মানুষ মরছে হাজার
    আমেরিকার ছোড়া অস্ত্রে ।
    সন্ত্রাস চালায় তেল আবিব সঙ্গে আমেরিকা
    ইসলামাবাদ সঙ্গে দোশর ,খুজছে ওসামা ।
    বিশ্ব জুড়ে প্রতিরোধ গড়ো বামপন্হীরা ডাকেন
    শহর কাঁপিয়ে মিছিলে মিটিং এ
    চীৎকারে গলা ফাটে
    বাম নেতারা ময়দানে বসে হাপুস নয়নে কাঁদেন ।

    রচনা : ২০০২ সালে ।
    কবিতাটি ৪৭ বার পঠিত হয়েছে।

    ReplyDelete
  2. মনুগুরুর জঙ্গলে
    - নিখিল বিশ্বাস ।

    মনুগুরুর জঙ্গলে

    মনুগুরুর জঙ্গলে হাঁটতে হাঁটতে একদিন
    আমরা গেলাম হারিয়ে ।
    তোমার সঙ্গে ছোট্ট মেয়ে শ্রেয়া ;
    বনভোজনে সবাই মশগুল রান্নার আয়োজন
    টুকিটাকী কাজ ।
    আমরা গল্প করতে করতে শুনলাম
    তোমার সুরেলা গলায় রবীন্দ্রসংগীত
    দুএকটা স্বরচিত আমার কবিতা ।
    আমি তোমাকে ম্যাজিক দেখাই কিছু বুদ্ধির খেলা ।
    তুমি যে এত সহজে অভীভূত হবে বুঝতে পারিনি আমি ।

    তারপর আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কিছুই মনে নেই আর
    নিষিদ্ধ অলকানন্দে জলকেলী করে ছুঁয়েছি তোমাকে
    স্বপ্ন সমুদ্রে ডুব দিয়ে উঠে একেবারে সোনালী বিকেল ।

    বনভোজনের হট্টগোল সবাই ব্যস্ত তার নিজস্ব সুরে
    আমরা ভুলিনি কিছু, আমাদের সুখের সংসার ।

    দুর্বাশার শাপ নিয়ে আমি ও
    করবী এখনো বেঁচে আছি ;
    পৃথিবীর দুই প্রান্তে ;ওষ্ঠে সুখ নিয়ে
    আমাদের নির্বুদ্ধিতায় ।

    https://www.facebook.com/panihaty

    ReplyDelete
  3. কবে শেষ হবে
    - নিখিল বিশ্বাস ।

    কবে শেষ হবে

    বসে আছি একা আজ উন্মুক্ত প্রান্তরে
    সূর্য্যের আসন্ন মৃত্যু ভেবে ভয় পাই
    চতুর্দিকে ছেয়ে যাবে অমেয় আধাঁরে
    কোনদিন উত্তরণ হবে না আলোতে ।

    দূরে ঐ ধ্যানমগ্ন পোষ্টের আলোয়
    কারা নাচে টুইষ্ট নাচ শব কাধেঁ নিয়ে
    স্ফূর্তির বন্যা নামে মৃতদেহ ঘিরে
    ভয় লাগে বড় ভয় এই দৃশ্য দেখে ।

    এ কোন বাজীকরের অনিশ্চিত যাদু
    ক্রমে ক্রমে টেনে নেবে সব আলো শুষে
    ভাবি বসে কবে শেষ হবে এই খেলা
    এই আলো এই মৃত্যু এই অন্ধকার মেলা ।

    রচনা : ১১/৯/৭০

    ReplyDelete
  4. পন্ডীচেরী আশ্রম
    - নিখিল বিশ্বাস ।

    পন্ডীচেরী আশ্রম

    অরবিন্দের অমর কীর্তি পন্ডীচেরী ধাম
    অনেক দার্শনিক তত্ত্ব বিদগ্ধ লেখনী
    সবকিছু ছাপিয়ে যায় মানুষের ভালোবাসা ।
    দূর দূরান্ত থেকে আসে শান্তির খোঁজে
    দার্শনিক গূঢ় তত্ত্ব কিছু বোঝে বা না বোঝে ।
    আশ্রমে ধ্যানমগ্ন ভক্তরা সবাই
    সকাল সন্ধ্যায় কাটে ঘন্টা কয়েক ।
    ভক্তির পরাকাষ্ঠা নিস্তব্ধ নিশ্চল ।
    কী সেই বানী যার জন্য
    ছুটে আসা হাজার মাইল ।
    ভক্ত এবং কর্মীবৃন্দ ব্যস্ত সবাই
    কাজ অকাজ ধ্যান আর আশ্রম বিহার ।
    কী সেই বানী যার জন্য ছুটে আসা
    নিয়ম মাফিক সব কাজ ফেলে রেখে
    সব দায় দূরে ঠেলে এখানে হাজির ।
    নেই কোন বানী ,নেই কোন স্তব
    এ যেন মন্দির শুধু নিশ্চল নির্বাক ।

    তাহলে শ্রী অরবিন্দ কি লিখেছেন এত
    সে সব সহজ করে মানুষকে শেখানো যেত ।
    ভক্তরা ধ্যান করে ভক্তরা আড্ডা মারে
    প্রায় বিনে পয়সায় খাওয়া এবং থাকা ;
    আরো কি রহস্য আছে জানে কর্মী বৃন্দ
    ভক্তরা শান্তি খোঁজে এবং আনন্দ ।

    20/11/2001 লেখা

    ReplyDelete
  5. তোমার উচ্ছল ঢেউ
    - নিখিল বিশ্বাস ।

    তোমার উচ্ছল ঢেউ

    তোমার চোখে গভীর দীঘির কালো ছায়া
    ক্যালেন্ডারের নেশার মতো মাদক তোমার শরীর
    কালো রঙের স্কার্ট জাপটে আছে
    কাজু বাদামের মতো হাঁটু ।
    তোমার মুখ শ্রাবস্তীর কারুকাজ করা
    অনন্য ভাস্কর্য্য ।

    এর মধ্যে তুমি পাল্টে গেলে বাটিক প্রিন্টের শাড়ীতে ।
    তোমার গভীরতা ক্রমশঃই বেড়ে গেলো
    হয়ে গেলে খরস্রোতা নদী ।
    নদীর দুপারে দাড়িয়ে আছে অজস্র বৃক্ষ বট
    গভীর গোপন সম্পর্ক নিয়ে কথা বলে জল ।
    যদি ও নিজেকে নদীর তীর বলে জানি
    তোমার উচ্ছল ঢেউ আটকাতে হবে আজ
    পাহাড়ের সঙ্গে তাই করেছি সখ্যতা
    পানসী সাজিয়ে যাই
    নেমে যাই তোমার বুকের গভীরে ।

    রচনা :১৯৭১সাল

    ReplyDelete
  6. তোমাদের অন্দরমহলে
    - নিখিল বিশ্বাস ।

    তোমাদের অন্দরমহলে


    কেমন করে এ গভীরতা হাত দিয়ে ছুইঁ
    কেমন করে তোমার চোখের জল হাত দিয়ে মুছে দেই ,
    কেমন করে এই অন্ধকার বিযুক্ত করে আনি আলো আর আলো ।
    যুদ্ধ সে ত সমাপ্ত হয়ে আছে কাহিনী কথায়
    পরাজিত সম্রাট ক্ষুরধার কথা দিয়ে কবিতা সাজায় ।
    ভিখারিণী তার চোখের কোনায় দেখি গভীর বিষাদ ।
    ভিক্ষুকের ভাঙ্গাপিঠ ,নুলো হাত দেখলে পরে পকেট হাতাই
    কিছু ত দিতেই হয় ,কিছু কষ্ট যাক ঘুচে ।


    কিন্তু এই অতল স্পর্শী অমেয় দুঃখ
    কি করে মেটাবো আমি ;
    সেই কথা ভেবে ভেবে আমি পৌঁছে যাই
    একদিন তোমাদের অন্দরমহলে ।
    কবিতার শব্দে নয় তোমাদের চেতনায়
    স্বপ্ন হয়ে বেঁচে থাকতে চাই ।

    ReplyDelete
  7. সন্ধ্যার চৌরঙ্গী
    - নিখিল বিশ্বাস ।

    সন্ধ্যার চৌরঙ্গী

    বিকেল পাঁচটা হলে রাস্তায় গলে পড়ে মায়াবিনী আলো
    গালে রুজ ঠোটে রঙ
    হেমন্তের ম্লান রোদ তোমার গ্রীবায়
    স্ফটিক স্বচ্ছ ত্বক প্রগাঢ় যৌবন মেলে দিলো ।
    ব্যাধিগ্রস্হ স্বামী আরো দুটো মুখ
    দুবেলা নাহলেও একবেলা নিতান্ত দরকার
    ডালভাত ,বাড়ী ভাড়া, কিছু একান্ত ওষুধ
    নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, ধার দেনা মিথ্যে কথা রোজ
    মান সম্মান সব যায় চাকরির মেলেনা কোন খোঁজ ।

    কিছু বিক্রি করা যায় কিছু বিজ্ঞাপন
    খরিদ্দার এখানে ওখানে শিথিল যৌবন
    পাওয়া যায় অনায়াসে ময়দানে বসে ।
    একদিন সব ছিল সম্মান প্রতিপত্তি সভ্রান্ত জীবন
    ছিলনা কখনও স্বপ্নে এমন অনটন ।

    বিপদে পড়লে আত্মীয় ব্ন্ধুরা কেউ কারো নয়
    সন্ধ্যার চৌরঙ্গী ওড়ে যেন মায়া প্রজাপতি
    নিজেকেই করতে হবে মুস্কিল আসান ।
    বেচেঁ থাকা আনন্দের ,যতক্ষন আছে এই প্রাণ
    চলো যাই বসি গিয়ে আউটরাম ঘাট
    তোমার ও ত কিছু চাই সন্ধ্যার বিনোদন
    আমি আছি সশরীরে ,উড়বো কিছুক্ষন ।

    ReplyDelete
  8. বজ্রহানা দাও
    - নিখিল বিশ্বাস ।

    বজ্রহানা দাও

    পরিপূর্ণ আব্রুহীন রাস্তাটার মতো
    তোমাদের শিলীভূত অস্তিত্ত্বের শিরঁদাড়া দিয়ে
    অনেক অনেক অন্যায় প্রতিদিন
    সোনা হয়ে যায়
    মুক্তো হয়ে হেসে ওঠে তোমার ক্ষুধায় ।
    তবু কি এখনও তুমি
    দীর্ণ বিদীর্ণ হয়ে প্রতি অভিঘাতে
    এদের ক্ষুধার যজ্ঞে আত্মাহুতি দিয়ে
    নচিকেতা হবে ?

    চিৎপটাং অসহায় রাস্তাটার মতো
    বেচেঁ থেকে কি লাভ ?
    তার চেয়ে এস না বন্ধু
    কিছু সুখ কিছু সাধ তৃপ্ত হয়ে যাক ।
    বিদ্যুৎ গরিলা হও রক্ত ও নিশ্বাসে
    রাস্তার সমস্ত পিঠ ঢেকে দাও গভীর বিশ্বাসে ।

    জমা থাক বিস্ফোটক অতল গভীরে
    একটা বোতাম টিপে সময়ের নাভীদেশে
    এদের সুখের স্বর্গে বজ্রহানা দাও ।

    1971

    ReplyDelete
  9. তোমরাই সত্যি
    - নিখিল বিশ্বাস ।

    তোমরাই সত্যি

    ট্রেনে যেতে যেতে ট্রেনের অস্তিত্ত্বটাকে
    কখনও সম্পূর্ণ ভুলি
    মনে হয় কামরা নয়, এ আমার তৈরী করা
    সুসজ্জিত ঘর ।
    এ পথ পরিক্রমায় তোমাদের ভুলে যাই কখন ও
    নিশ্চিন্তে অন্যান্য চিন্তায় ব্যস্ত থাকি সত্যি ।
    তখন সেটাই বাস্তব এ জীবন কর্মময় সংঘাতে সর্পিল ।
    নিজেকে ব্যর্থ মেনে ধাপে ধাপে উঠে যেতে চাই
    অথচ সত্যি যেটা ইষ্টিশন প্রেম হয় ট্রেন থেমে যায়
    তাই আবার ভেবে দেখি তোমরাই সত্যি বটে আর কিছু নয় ।

    বন্ধ ঘর একঘেয়ে ট্রেনেতে যখন ঝিমুই
    ইষ্টিশন হইচই বলে দেয় নামার সময় ।

    ১০/৮/৭২

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

সুকান্ত ভট্টাচার্য-এর কবিতা

সৈয়দ শামসুল হক-এর কবিতা