আবিদ আনোয়ার-এর কবিতা
আবিদ আনোয়ার-এর কবিতা
জনৈক মাকড়ের কাছে প্রার্থনা
Friday, May 18, 2018, 4:22 AM
বোনো তুমি, যত পারো বুনে চলো কৌটিল্যের জাল
ক্রমশ সারল্য থেকে ছুটি নিয়ে আমিও আজকাল
তোমার নিপুণ শিল্পে আত্মাহুতি দেয়ার আহ্লাদে
আবিষ্ট মাছির মতো পড়তে চাই নানারূপ ফাঁদে--
কেননা চুড়ান্তে যাবো; নিরিবিলি জীবনের স্বাদ
চেখেও দেখেছি--এর অন্তর্গত কী এক বিষাদ
অদৃশ্য নরকে টানে। না এমন খণ্ডমৃত্যু নয়,
আমূল নিশ্চিহ্ন করো কিংবা দাও চুড়ান্ত বিজয়।
যে-রমণী নগ্ন শুয়ে সিসিলি’র সমুদ্রের পারে
রোদের আমেজ মাখে, রাতে থাকে ওজার্ক পাহাড়ে;
বগলে পুরুষবন্ধু, লোশনাদি এবং ক্যামেরা
হয়তো উদ্দাম কোনো নৈশক্লাবে নর্তকীর সেরা
তাকেও দেখেছি একা ভেসে যেতে যন্ত্রণার জলে;
ভাঙাচোরা বর্তমান কিংবা কোনো স্মৃতির কবলে
ভেতরে-ভেতরে ভাঙে ব্যক্তিগত তারও রাজ্যপাট
অথচ লিঙ্কন থেকে ব্রুনাইয়ের সামন্ত সম্রাট
একেই ফলাও করে নির্দ্বিধায় স্বাধীনতা বলে
জীবনের বিষবৃক্ষ ঢেকে রেখে মোহন বল্কলে।
এরচে’ অনেক ভালো মোহাবিষ্ট পতঙ্গের মতো
তোমার কুটিল জালে টেনে নাও, আমিও সম্মত।
দারুণ অসহ্য এই টুকরো-টুকরো অলিখিত ফাঁদ:
কয়েদী ও দর্শনার্থী মাঝখানে লোহার গরাদ,
কে যে কোন্ ভূমিকায় বস্তুতই শক্ত নিরূপণ--
দু’দিকেই কারাকক্ষ, চৌকিদার এবং জীবন।
কোলাজ
Friday, May 18, 2018, 4:13 AM
নীলের ডোরাকাটা সবুজ মাছরাঙা
গেঁথেছে লাল ঠোঁটে রুপালি মৌরলা
বেরুবে ছাইরঙা গলিত বিষ্ঠায়
তবু সে নিয়তিকে লেজের চাঁটি মারে
অপার নিষ্ঠায়
জানালা খুলে ব’সে প্রায়শ রাতে দেখি
আকাশে দল বেঁধে মেঘেরা খেলা করে
হা-করা কালো তিমি চাঁদকে গিলে খায়
আঁধার পেট ফুঁড়ে তবুও প্রাণপণে
জোছনা ঝলকায়
নিবিড় চাষী জানে মাটির কোপনতা
কতটা আড়চোখে তাকায় ব্যর্থতা
ফসল খেয়ে ফেলে খরা ও বন্যায়
খনাও বলেনি তো প্রকৃতি নিজে করে
এতটা অন্যায়
কিছুটা নিজে জানি বাকিটা মহাকাল
দেয়ালে নোনা ধরে টেকে না জলরঙ
(অজর পদাবলি বলে তো কিছু নাই)
অন্ধ তুলি দিয়ে কালের ক্যানভাসে
তবুও আঁচড়াই
ঘোর কেটে গেলে
Thursday, May 17, 2018, 11:53 PM
হয়তো এখনও আছি অর্ধস্ফুট গোলাপের মতো--
বোঝেনি শরীর-সত্তা কাকে বলে পূর্ণ জাগরণ;
দরিদ্র ইন্দ্রিয়গুলো চিনেছে যে বস্তুবাস্তবতা
কখনও জাগ্রত হলে চিনে নিতো আরেক জীবন।
যদি এ-রহস্যমালা কোনোদিন এই গূঢ় অন্তর্বাস খোলে
হয়তো দেখবো কিছু বর্গক্ষেত্র ঢুকে বসে আছে
অসংগত পৃথিবীর বেমক্কা বর্তুলে:
প্রকৃত রাজার কাঁধে গোলামের তকমা তুলে দিয়ে
গোলাম রাজত্ব করে জগদ্দল প্রভুত্বের পতাকা উড়িয়ে।
দিব্যদৃষ্টি খুলে গেলে তুমি দেখে নিয়ো
জীবন কামনা করে যা কেবল কবিদের প্রিয়;
মানুষের রিপাবলিকে প্লেটোদেরই প্রয়োজন নাই,
বহুকাল ভুল করে খাকিদের কুচকাওয়াজে বেজেছে শানাই।
কোনোদিন সত্যি সত্যি ঘোর কেটে গেলে
তোমারও সিঁথির নিচে দেখা যাবে নাগিনীর টিকা,
রূপের নিকেলে ঢেকে হীন কোপনতা ঘর করো কামার্ত চণ্ডিকা।
নারীর প্রতিমা গড়তে ঈশ্বরের মহামন্ত্রে হয়েছিলো ভুল:
উরু-নাভি-বুক আর মুখের লাবণ্য এঁকে সাত-তাড়াতাড়ি
পৃথিবীতে ছেড়েছেন মোহময়ী খড়ের পুতুল
(তখনও ভেতরে কিছু কুটো রয়ে গেছে!)
এবং এদেরই সঙ্গে আমাদের বহু ব্যর্থ রজনী কেটেছে।
এইসব অর্ধনারী পারে শুধু উস্কে দিতে
আলুথালু যৌবনের রুপালি বমন;
নারীর সান্নিধ্য দেবে আরো এক শুদ্ধ শিহরণ
বাৎসায়ন জানে না যা, আফ্রোদিতি আছেন আঁধারে--
এমন রমণী শুধু কবিরাই গড়ে নিতে পারে।
আমাকে বিশ্বাস করো কবিতার দিব্যি দিয়ে বলি:
সাক্ষী সেই কাহ্নু থেকে অধুনার এলো-পদাবলি:
শিল্পের জলাঙ্গী জুড়ে গুটিকয় রিক্ত পাতিহাঁস
যেন কিছু ডাঙার গুইসাপ অকথ্য উল্লাসে করি ব্যর্থ জলকেলি!
এসব বুঝবে তুমি
শাশ্বতীর সুকান্ত মরাল যদি কোনোদিন সত্যি ধরে ফেলি।
বস্তুর খোলসকেই ভেবে নিয়ে খণ্ড খণ্ড রূপের মহিমা
কেবল বাড়িয়ে চলি আরোপিত উপমা ও প্রতীকের সীমা;
হাজার বছরে তাই পেয়েছি কেবল কিছু প্রতিতুলনার কবি,
জন্মান্ধ শিল্পীর আঁকা এলোমেলো জীবনের ছবি।
আরেক ঈশ্বর চাই আমারই চৈতন্যজাত সত্য দিয়ে গড়া;
পৃথিবীতে গড়ে নেবো শব্দের অপ্সরী আর কথার অমরা।
প্রত্নরমণী
Thursday, May 17, 2018, 7:51 PM
তোমাকে দেখেনি মধ্যযুগের নিপুণ পটুয়া,
অজন্তা কিবা ইলোরার ভাস্কর--
তাহলে দেখতে শত ক্যানভাসে,
ব্রোঞ্জে-পিতলে কষ্টিপাথরে,
টেরাকোটা-কাঠ-সোনার পুতুলে
তুমি সাজিয়েছো পুরাকীর্তির সবগুলো যাদুঘর!
কৃষ্ণের পাশে যে আছে দাঁড়িয়ে
যৌবনবতী পাথুরে-স্তনের নারী
লজ্জায় ভেঙে খান খান হবে
তুমি যদি শুধু একটু সাহসে
জোড়ামূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে
খুলে ফেলো এই শাড়ি!
তোমাকে মানাতো প্রত্নবেদীতে পঞ্চালিকায়
গোপীচন্দনে তিলক পরালে বৈষ্ণব কবি,
কোলাহলময় বিশ-শতকের শেষপাদে কেন এলে?
নষ্ট কালের ভ্রষ্ট প্রেমিক
কী দিয়ে তোমার বন্দনা করি?
নারী-কীর্তনে ব্যবহৃত সব উপমা দিয়েছি ফেলে!
তোমাকে দেখেনি চিতোরের রাজা,
রূপের পূজারী রসিক রত্নসেন--
তাহলে দেখতে নিদারুণ ক্ষোভে
মিথ্যুক সেই হীরামন পাখি,
এমনকি প্রিয় পদ্মাবতীকে এক-শূলে চড়াতেন!
নর্তকী নও, তোমার চলার পথ জুড়ে তবু
প্রবাহিত তুমি নৃত্যের নানা মুদ্রায়:
দ্যভিঞ্চি আর হেনরী’র নারী
আমাদের প্রিয় রাজহংসীরা
তোমাকে দেখেই গ্রীবাভঙ্গির অসঙ্গতিকে শোধরায়।
তুমি চলে গেলে ঘর জুড়ে হাঁটে তোমার প্রতিমা,
সারা বাড়ি হয় পরাবাস্তব কোনারক ও খাজুরাহো:
সাজের টেবিলে-বিছানা-বালিশে,
ফাঁকা করিডোরে-বিরান হেঁসেলে
থেকে থেকে জলে ‘তুমি নেই’ এই সত্যের দাবদাহ।
ডুবে যেতে যেতে
Thursday, May 17, 2018, 11:15 PM
জলমগ্ন বাঙলাদেশ: নাকি এক ল্যাগব্যাগে তরল ড্রাগন
হিমালয় থেকে নেমে গিলেছে শস্যের মাঠ, বন-উপবন;
নিঝুম দ্বীপের মতো ভাসমান শুধু কিছু ক্লিন্ন লোকালয়
তাকেও জুজুর মতো লেলিহান জিহ্বা নেড়ে সে দেখায় ভয়,
তবুও জীবনছন্দে মুখরিত ব্যস্ত জনপদ
উজিয়ে সকল বাধা, পায়ে-পায়ে সমূহ বিপদ
যে-যার কর্তব্যে যায়; অজানা আতঙ্কে কাঁপে দুরু দুরু জননীর প্রাণ
কোমরে ঘুঙুর বেঁধে ছেড়ে দিয়ে হাঁটি-হাঁটি কোলের সন্তান:
শব্দ শুনে বুঝে নেয় নানা কাজে ব্যস্ত প্রিয়জন
কতদূর হেঁটে গেলো দুষ্টুমতি তাদের খোকন।
* * *
নুনুর কাছে ঘণ্টি নড়ে,
সাধ্যি কী যে খোকনসোনা খন্দে পড়ে!
ভুবন জুড়ে বাজছে যেন একটিই সুর, একটি শুধু গান,
ধ্যানীর মতো সারাটা বাড়ি শুনছে পেতে কান।
* * *
তাহলে কি উৎকন্ঠিত আমারও জননী কিংবা বুবু ও দাদীমা
এভাবেই এঁকে দিতো এ আমার গন্তব্যের সীমা?
* * *
হয়তো সে শব্দময় অস্তিত্বের সীমানা পেরিয়ে নিঃশব্দেই জানি না কখন প’ড়ে গেছি বিকট পাতালে; চারপাশে খানাখন্দ: উপদংশ-কবলিত স্বৈরিণীর সুবর্ণ ব-দ্বীপে কাদা, আমাকে লোভায় তার সুগভীর ব্যক্তিগত খাড়ি; বিষম হা-করে থাকে পানপাত্র; বন্ধুর বাড়িয়ে-দেয়া অমসৃণ বাঁকা করতল, দ্রাবিড়ীয় কিশোরীর গালে-পড়া টোল আর চটুল হাসিতে খুব ফেটে-পড়া প্রেমিকার মুখের ব্যাদানকেও আজকাল বড় কোনো গর্ত মনে হয়--ক্রুর জল পাক খায় লাভার দাপটে; উন্মাতাল ঘূর্ণিজলে সুবোধ কুটোর মতো ভাসি-ডুবি বিবিধ মুদ্রায়...চুমুকে চুমুকে ডুবি...চুমুতে চুমুতে; নগরীর নানাস্থানে বিপদ-সরণি, মেয়রের পেতে-রাখা অ্যাশফল্টের চোরাবালি আমাকে ডোবায়।
‘আপদে ভরসা প্রাপ্তি’ এমন অভয়বাণী লেখেনি ঠিকুজি
অতল পাতালে তবু ডুবে যেতে যেতে প্রায়শ কী যেন খুঁজি;
পরাস্বপ্নে কেঁদে ওঠে আজও কিছু প্রত্যাশার ক্ষীয়মাণ রেশ.
ঘুঙুর বাজাবো বলে হাতড়ে ফিরি কোমরের বিভিন্ন প্রদেশ!
সমগ্র কোথায় তুমি?
Friday, May 18, 2018, 4:45 AM
সমগ্র কোথায় তুমি? আর্তস্বরে ডাকি যতবার
দূর থেকে সাড়া দেয় অতীন্দ্রিয় কে এক আঁধার!
খণ্ডের যোগফল থেকে বহুদূরে সমগ্রের বাড়ি
জেনেও খণ্ডাংশগুলো জোড়া দিই যতটুকু পারি।
প্রতিটি গন্তব্য তার কিছু চিহ্ন এঁকে রাখে পথের ওপর,
হিজিবিজি সেইসব জটিল জ্যামিতি থেকে সমগ্রের ঘর
খুঁজতে গিয়ে মনে হলো আমি এক
সদ্যোজাত শিশুর মতন
মা বলতে যে বোঝে শুধু উষ্ণ দুই গোলাকার স্তন।
কখনোবা চোখে মেখে বিপুল বিস্ময়
তাকায় মায়ের মুখে, সে-মুহূর্তে তাকে মনে হয়
প্রকৃত সন্তের মতো, ধ্যানমগ্ন গিলে খায় সোহাগের ধ্বনি,
প্রবল বিশ্বাসে তার ক্ষুদ্র চোখ বলে ওঠে: এইতো মা-মণি!
ক্রমে ক্রমে চেনে তাকে সান্নিধ্যের গাঢ় উষ্ণতায়,
অবশেষে উন্মোচিত নিজস্ব নারীর মতো বাবার শয্যায়:
মূলত রমণী তিনি--পরিমেয় উরু-বুক-জরায়ু-জঘনে
তবুও জননী থাকে চিরদিন দেবীতুল্য সন্তানের মনে।
সমগ্র কোথায় তুমি? ডাকতে ডাকতে বেলা চলে যায়,
এমনকি তত্ত্বযোগী সাধুবাবা ঘুরেফিরে হাজার দরগায়
কখনো পাননি কিছু, বললেন: আজীবন সমগ্রকে খুঁজে
আমিও করেছি জড়ো নানা-রঙা চতুর্ভুজ,
মিশিয়েছি গোলকে-ত্রিভুজে
(বলেই মেললেন তিনি বহুবর্ণ তালি-মারা গায়ের গিলাপ)
আমারও অন্বিষ্ট ছিলো ভবের দারুণ শীতে ভবানীর তাপ,
তবু দ্যাখ্! এ-ও শুধু তালির যোগফল, স্বরচিত মলিন ময়ূর!
পেখম মেলতে হলে যেতে হবে আরো বহুদুর....
বিচূর্ণিভূত স্বপ্নের ছাই
Friday, May 18, 2018, 4:57 AM
কী করে বলবো ভুলে গেছি সব
সঞ্চয়ে আর স্মৃতির কণাও নাই--
এখনও তো এই ধূসর মগজে
বিচূর্ণিভূত স্বপ্নের ছাই ঝড় তোলে প্রতিদিন।
ভেবে খুব হাসি পায়:
নাগিনীর গ্রাসে অর্ধবিলীন ব্যাঙ যেন আমি কেউ
আর্দ্র করুণ অন্তিম ডাকে জীবনকে ভেংচাই।
মরণের আগে এমনি ক’দিন
বাঁকা হেসেছিলো অমলের বউ
গভীর নিশীথে ডাক দিতো যাকে কদমের ডাল--
দড়ি হাতে নিয়ে জোনাকির ভিড়ে
বিভোর দাঁড়িয়ে সাত-পাঁচ ভেবে
সম্বিতে ফিরে চমকে দেখতো আরেক সকাল!
ফেরাতো কে তাকে?
ঝিঁঝির কান্না নাকি জোনাকির প্রদীপ্ত আহ্বান:
হয়তোবা শত গঞ্জনাতেও পেয়েছিলো কিছু সুখ,
বিড়ালীর মতো চুক চুক ক’রে
চেখেছিলো সেও স্বামীর সোহাগ--
হয়তো দেখেছে সিনেমা-নাটকে,
পড়েছে গল্পে-উপন্যাসেও
মরণার্থীকে ফিরিয়ে এনেছে প্রাপ্তির দায়ভাগ।
জৈবনিকতা
Friday, May 18, 2018, 5:33 AM
অনেক দেখেছি পাঁকাল-বিলাসী কাদাজলে রাজহাঁস,
মসৃণ পাখা রেশমখচিত ছোঁয় না পঙ্কিলতা!
অথবা আমার বালকবেলার মোহময়ী মেথরানী
রূপের ছটায় ভুলে গেছি তার গুয়ের রাজ্যে বাস।
পট্টি যখন বাঙলা মদের উৎসবে গোলজার
সে তখন ছিলো পট্টরানীর আসনে অধিষ্ঠিত―
ঘাগড়ায়-লাগা শুদ্র অথবা ভদ্রপাড়ার মল;
“লছমী নাকি রে!” কুশল শুধাতো তবু খোদ জমিদার।
কাদায় পদ্ম, চাঁদে কলঙ্ক এ-কথা এখন ক্লিশে,
ময়ূর নিজে কি পেখম গোটায় বিশ্রী পায়ের খেদে?
রূপের দোহাই শুচিবায় ছেড়ে জৈবনিকতা শেখো―
খ্যাতিমান বহু কবিও ভুগেছে উপদংশের বিষে।
নূহ নবীর কাছে একটি সওয়াল
Thursday, May 17, 2018, 8:38 PM
আপনিও আল্লা’র নবী, মানব কল্যাণহেতু প্রেরিত পুরুষ--
যতক্ষণ এই দেহে প্রাণ আছে, না-হারাই হুঁশ
আপনার মর্যাদাহানি করতে পারি নই আমি তেমন মুরতাদ,
একটি শুধু সওয়ালের জওয়াব জানতে জাগে বড়ো সাধ।
এজতেহাদে সত্য মিলে বলেছেন স্বয়ং মা’বুদ--
রুহের কন্দর থেকে অহরহ ওঠে তাই প্রশ্নের বুদবুদ।
সেই কবে পৃথিবীতে এসেছিলো গজবের বান,
আপনার কিস্তিতে শুধু ঠাঁই পেয়েছিলো কিছু সাধু পুণ্যবান
নরনারী, পশুপাখি, এর সাথে বৃক্ষাদি ও ফসলের বীজ,
নতুন পৃথিবী গড়তে যা কিছুর প্রয়োজন ইত্যাকার চিজ।
পবিত্র মাটিতে ফের জেগেছিলো অনাবিল জীবন-স্পন্দন,
পুণ্যবান মানুষেরা চুষেছিলো সতীসাধ্বী পৃথিবীর স্তন।
তাহলে কী করে সেই বিমল ঔরস আর পবিত্র জরায়ু
জালেমের জন্ম দিলো, দুনিয়াতে দুষ্টচক্র পেলো পরমায়ু?
ভয় হয় ফের যদি অনুরূপ বান আসে এই পৃথিবীতে
পুণ্যাত্মাকে জলে ফেলে ওরা নিজে ঠাঁই নেবে কালের কিস্তিতে!
১৪০০ সাল
Thursday, May 17, 2018, 11:47 PM
আজ ভোরে সূর্য নয়
দিগন্ত রাঙালো নিজে রবীন্দ্র ঠাকুর:
শ্মশ্রুময় দেবকান্তি, অমিতাভ চিবুকের নূর
ছড়ালো রৌদ্রের মতো
যেন এই অপ্রাকৃত আকাশের নীল
লক্ষকোটি জাগর জোনাকি নিয়ে
করে ঝিলমিল!
প্রশ্নচিহ্ন হয়ে জ্বলে চেতনার গভীর ভেতরে--
“কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
কৌতূহল ভরে?”
দিগন্তে তাকিয়ে দেখি
ফ্যালফ্যাল চেয়ে আছে মহান কাঙাল--
কেঁপে ওঠে ইতস্তত ভ্রষ্ট মহাকাল।
গীতাঞ্জলি হাতে নিই ঝেড়েমুছে ধুলা:
হঠাৎ পালাতে গিয়ে লজ্জা পেলো
গুটিকয় কালের আরশুলা।
আমি কার খালু
Friday, May 18, 2018, 6:28 AM
ধীরে ধীরে হাট ভাঙছে,
অন্ধকার টেনে ধরছে দিগন্তের ফিকে লালসালু--
ডেকেছি বিস্তর তবু কেউ এসে বলে নাই আমি কার খালু!
উল্লোল বাজারি শব্দে ডুবে গেছে হার্দ্য এই ডাক,
বিপণি বিতান থেকে মাছের মহাল, মায় অন্ধগলি ঘুরেছি বেবাক;
কানফাটা শোরগোলেও কেউ কিছু ভোলে নাই কার কী ভূমিকা:
লাভ বুঝে দর হাঁকে বিক্রেতারা,
ক্রেতা কেনে দেখে দেখে ফর্দে কী কী লিখা।
দুরস্ত সাহেব-সুবো, মলিন ভিখিরি থেকে উলঙ্গ টোকাই
এ-হাটে সবাই ব্যস্ত--আমি শুধু দিগ্ভ্রান্ত কিছু মনে নাই
কী করতে এসেছি আর হারিয়েছে কাকে নাকি নিজেকেই খুঁজি!
ছিলো কি আমার কোনো ঠিকানা ও নিজস্ব ঠিকুজি?
জানিও না এই হাটে কে আছেন এমন দয়ালু
আমাকে যাবার আগে ঠিকঠাক বলে দেবে আমি কার খালু!
ফল্গুধারা নীরবে বয়
Friday, May 18, 2018, 6:28 AM
স্রোতে তোমার জন্ম, তুমি স্রোতেই হবে লীন;
ফল্গুধারা নীরবে বয় সাড়াশব্দহীন।
হাট বসালে ক্রেতাও জোটে, খৈ ছিটালে পাখি;
নির্মাতাই জানে কেবল পণ্যে কত ফাঁকি!
কালের ডামাডোলের ফাঁকে চক্ষে দিয়ে ধুলো
ভাবছো তুমি গানের সাথে বিকাবে শোরগোলও?
প্রাত্যহিকে রঙ মাখিয়ে শাশ্বতকে জয়
করাও যাবে--জানতে হবে রঙের পরিচয়।
কোথায় তুমি জানলা খোলো আদপে নাই ঘর;
যুগ চেনো না কী করে তবে আনো যুগান্তর?
স্রোতে তোমার জন্ম, তুমি স্রোতেই হবে লীন;
ফল্গুধারা নীরবে বয় সাড়াশব্দহীন।
উত্তরাধুনিক বৃষ্টিপাত
Thursday, May 17, 2018, 11:17 PM
পরাবাস্তব বৃষ্টিতে ভেজে বগলের বর্ষাতি--
শুকনো আষাঢ়, মিছে গর্জায় আকাশের কালো হাতি;
কখনো ধূসর নীলিমায় শু’য়ে গর্ভিনী কোনো মোষ
হতাশার মতো প্রসব করছে সাদা-সাদা খরগোশ!
এ-আষাঢ় যাবে সাদাকালো আর নীলের কোলাজ দেখে?
বর্ষাসংখ্যা সাময়িকী জুড়ে মেঘের পদ্য লে’খে?
ঈশানের দিকে চেয়ে দেখি যেই জমছে সম্ভাবনা
‘বৃষ্টি হবে না’ ঘোষণায় বলে ঢাকা বেতারের খনা।
অবচেতনের কোথায় তবুও কদমের ঘ্রাণ পাই:
অলীক জলের শিহরণে কাঁপে করিডোরে বনসাই--
স্মৃতির ভেতরে পাঠশালা ভেজে, থকথকে বইখাতা;
আমি আর সাজু--মাথার উপরে যৌথ কলার পাতা।
ভেজা কিশোরীর শরীরের ঘ্রাণে সম্বিতে ফিরে দেখি
চৈত্রের মতো গদ্যরমণী চোখ ঠারে তার মেকি।
বৃথা শৃঙ্গারে শরীর কাঁপিয়ে শুয়ে পড়ি নিজ খাটে,
কামনার জলে “বঁধুয়া ভিজিছে দেখিয়া পরান ফাটে...”
করাতকলের শব্দেরা বোনে বর্ষাধুমল রাত--
আগামী শাওন বৃথা যাবে না তো, হবে কি বৃষ্টিপাত?
বাইশের লাল ঘোড়া
Thursday, May 17, 2018, 6:08 PM
মানতের মতো রেখে যায় কারা যার যার প্রিয় ফুল,
পাপড়ির সাথে মাধুরী মেশানো নানা বর্ণের তোড়া:
শহীদ মিনার নিমেষেই দেখে ফাঁকা তার বেদীমূল
একুশের ফুল খেয়ে চলে যায় বাইশের লাল ঘোড়া!
হঠাৎ কখনো জাবরের পরে উৎকট ক্ষেপে ওঠে:
খুঁজে ফেরে তার মৌসুমী মেনু রক্ত-মাখানো জল,
নগর দাপিয়ে পাগলের প্রায় উড়–ক্কু পায়ে ছোটে
পিছে ফেলে আসে গণভবনের নিকানো আস্তাবল।
হায়েনার মতো হিংস্র দু’চোখ, কেশর ফুলানো ঘাড়,
গগনচুম্বী দালানের চেয়ে উঁচুতে নাড়ায় কান;
খুরের দাপটে রাজপথে ওঠে মিছিলের হাহাকার,
নড়ে ওঠে কাঁচা টিনশেড থেকে ইটের দরদালান।
যবনিকাহীন ধারাবাহিকের চরিত্রগুলো আজও
অসি ঝলকিয়ে অভিষেক করে ক্ষুধিত সরফরাজ
মারে কত রাজা, উজির-নাজির, মরে যায় মহারাজও;
বেঁচে থাকে শুধু রাজকুমারের সাধের পক্ষীরাজ!
অভিযাত্রীর খেরোখাতা
Thursday, May 17, 2018, 6:07 PM
দেখে নিয়ো এই মাতাল তরণি
হারাবে না কোনো অপকুয়াশার ঘোরে:
অবচেতনের গহীনেও দেখি প্রোজ্জ্বল বাতিঘর!
ঘূর্ণির মহাসমুদ্রে ঘুরে-ঘুরে
অবশেষে ঠিকই পেয়ে যাবে বন্দর।
বাঁধা বৃত্তের পরিধি পেরোয় কেন্দ্রাপসারী ঘোড়া
অসম্ভবের দড়ি ছেঁড়ে তবু সরল রেখায় ছোটে,
এলোমেলো কিছু ডিগবাজি আর দুলকির নামও চাল;
আপাত বেতাল ভাঁড়ের তামাশা অর্থের পায়ে লোটে।
কালোয়াত, তুমি কতদূর যাবে কেন্দ্র তোমাকে টানে!
বৃত্তাবদ্ধ জীবনের কিছু হলো কি সম্প্রসার?
প্রবীণ ব্যাঙমা ছানি-পড়া চোখে বিস্ময়ে চেয়ে দেখে:
নবীন পাখিরা চিরায়ত খড়ে গড়ে আজও সংসার।
সুন্দরালি’র যৌথ অবচেতন
Friday, May 18, 2018, 4:35 AM
পউষের ঘাসে পরীর পেসাব !
বাতাস ধরেছে বরফের ভাব,
ফাটা পায়ে হেঁটে হাল নিয়ে যায় ক্ষিপ্ত সুন্দরালি―
বিগত রাতের ব্যর্থতা ভাবে:
কী যেন কীসব দেখেছিলো খা’বে,
পাঁচন উঁচিয়ে বিড়বিড় করে গাইটাকে দেয় গালি:
বাঁয়ে ক’লে দেহি ডানমুহি যাস,
মইত্যার মা’র দেমাগ দেহাস,
হেট হেট হট, সিধা অ’য়া চল্, ফাডায়া ফালামু বেডি;
মেয়া-মানুষের মন বোঝা ভার
দরদ বোঝে না দিল-কলিজার
পরান দিলেও ফুঁস মারে য্যানো মনুমোড়লের জেডি !
হায়রে কপাল ! দোষ ধরি কার,
একবেলা ভাত, দুই বেলা মাড়,
মইত্যার পেডে যাই কিছু ঢোহে কিরমিরা খা’য়া ফ্যালে―
জমিনে ঢোহে না লাঙলের ফাল
মাডি য্যানো দেও-দানবের ছাল
বানে-ডোবা জমি তা-ও ভাসি’ ওডে মরশুম চলি’ গ্যালে।
একাত্তরের যুদ্ধ করিছি
দেশের জন্যি অস্ত্র ধরিছি
কান ভরি’ হুনি হগলে আমারে মুক্তিযোদ্ধা ডাহে !
চিল্লায় কারা ‘চেতনা চেতনা’
নেতায়া পড়িছে গোখরোর ফণা―
চেতনা খা’য়া কি কারো কোনোদিন পেড ভরে কও বাহে ?
কোথায় বাপু যাই
Friday, May 18, 2018, 4:22 AM
রুনুঝুনুর মেজোচাচা
এবং তাদের চাচী
আজকে যদি ঢাকায় তবে
কালকে থাকেন রাচী,
সিঙ্গাপুরে কাশেন তারা
কাশ্মীরে দেন হাঁচি।
বুক-পকেটে পাউন্ড-ডলার
ব্যাক-পকেটে দিনার,
মস্কো থেকে নাস্তা সেরে
লন্ডনে খান ডিনার।
জাপান ব’সে চা পান ক’রে
বলেন তুলে হাই:
এই পৃথিবী এত্তো ছোট,
কোথায় বাপু যাই!
অ্যাকুরিয়াম
Friday, May 18, 2018, 4:21 AM
জলেই থাকি কিন্তু তবু মাছের থেকে দূরে
ঘর বেঁধেছি স্বচ্ছ বালি, জলজ ক্যাকটাসে;
রুই-কাতল ও টাকির মেকি ফেনানো বুদ্বুদে
মন মজেনি, ঘুচাতে চাই মীনের পরিচয়।
আমার ঘরে নৈশব্দ্যও শব্দ থেকে দামী:
ফ্রাই উপমা, সিদ্ধ ধ্বনি, কল্পনা চচ্চরি,
প্রতীক-পরাস্বপ্নে চলে অলীক খাওয়া-দাওয়া;
যুগান্তরের পোশাক প’রে ঢুকছে যুগের হাওয়া!
আমার ঘরে আসলে তুমি পেরিয়ে কাচের বাধা
দেখতে পাবে তেজস্ক্রিয় শাশ্বত এক নুড়ি,
সান্দ্র আলোর ফিনকি দিয়ে সত্য করে ফেরি,
একটু ছুঁ’লেই ছলকে ওঠে সমুদ্র-কল্লোলও।
যুগের তালে কানকো নাড়ে তিন-পাখার এক মাছ
পটভূমি স্বচ্ছ বালি, জলজ ক্যাকটাস...
যা তুই ফিরে যা পাখি
Friday, May 18, 2018, 4:21 AM
আমার ডাকনাম ধরে ডেকে ওঠে সুদূরের পাখি
অমর্ত্য যমজ ভগ্নি সে আমার কালো সহোদরা
জন্মলগ্নে এই হাতে বেঁধে দিয়ে রাখী
অচেনা সুদূর কোন্ মায়ালোকে উড়ে গেছে অনঙ্গ অধরা।
আমি একা বেড়ে উঠি রূপে-রসে মত্ত যুবরাজ
পেরিয়ে মায়ের স্নেহ, লালচক্ষু পিতার শাসন
স্বরচিত সংবিধানে গড়ে নিয়ে রঙিন স্বরাজ
একে একে জয় করি যৌবনের গন্ধে-ভরা দারুচিনি বন।
খেয়েছি নারীর মধু, এর চেয়ে বেশি তার ছলনার বিষ;
মধ্যবিত্ত মনে গেঁথে স্বামীত্বের বিপুল ব্যর্থতা
সুখের বিবর্ণ মুখে সাধ্যমতো মেরেছি পালিশ,
দুঃখকে নিয়েছি মেনে অনিবার্য রূঢ় বাস্তবতা।
এর মানে বলতে হবে সুখে-দুখে জীবন সুন্দর:
কুষ্ঠরোগী হেসে ওঠে মিষ্টি কোনো স্মৃতির জোছনায়,
নুলো ও ঠুঁটোর নারী সন্ততিতে ভরে তোলে পল্লবের ঘর;
কামরুলের কিষানীরা নিরিবিলি বিলি কাটে চুলের বন্যায়।
যা তুই ফিরে যা পাখি, কালো পাখি, এখন যাবো না--
আগে তো দু’হাত ভরে জীবনের লুটে নিই সোনা!
জনৈক মাকড়ের কাছে প্রার্থনা
Friday, May 18, 2018, 4:22 AM
বোনো তুমি, যত পারো বুনে চলো কৌটিল্যের জাল
ক্রমশ সারল্য থেকে ছুটি নিয়ে আমিও আজকাল
তোমার নিপুণ শিল্পে আত্মাহুতি দেয়ার আহ্লাদে
আবিষ্ট মাছির মতো পড়তে চাই নানারূপ ফাঁদে--
কেননা চুড়ান্তে যাবো; নিরিবিলি জীবনের স্বাদ
চেখেও দেখেছি--এর অন্তর্গত কী এক বিষাদ
অদৃশ্য নরকে টানে। না এমন খণ্ডমৃত্যু নয়,
আমূল নিশ্চিহ্ন করো কিংবা দাও চুড়ান্ত বিজয়।
যে-রমণী নগ্ন শুয়ে সিসিলি’র সমুদ্রের পারে
রোদের আমেজ মাখে, রাতে থাকে ওজার্ক পাহাড়ে;
বগলে পুরুষবন্ধু, লোশনাদি এবং ক্যামেরা
হয়তো উদ্দাম কোনো নৈশক্লাবে নর্তকীর সেরা
তাকেও দেখেছি একা ভেসে যেতে যন্ত্রণার জলে;
ভাঙাচোরা বর্তমান কিংবা কোনো স্মৃতির কবলে
ভেতরে-ভেতরে ভাঙে ব্যক্তিগত তারও রাজ্যপাট
অথচ লিঙ্কন থেকে ব্রুনাইয়ের সামন্ত সম্রাট
একেই ফলাও করে নির্দ্বিধায় স্বাধীনতা বলে
জীবনের বিষবৃক্ষ ঢেকে রেখে মোহন বল্কলে।
এরচে’ অনেক ভালো মোহাবিষ্ট পতঙ্গের মতো
তোমার কুটিল জালে টেনে নাও, আমিও সম্মত।
দারুণ অসহ্য এই টুকরো-টুকরো অলিখিত ফাঁদ:
কয়েদী ও দর্শনার্থী মাঝখানে লোহার গরাদ,
কে যে কোন্ ভূমিকায় বস্তুতই শক্ত নিরূপণ--
দু’দিকেই কারাকক্ষ, চৌকিদার এবং জীবন।
কোলাজ
Friday, May 18, 2018, 4:13 AM
নীলের ডোরাকাটা সবুজ মাছরাঙা
গেঁথেছে লাল ঠোঁটে রুপালি মৌরলা
বেরুবে ছাইরঙা গলিত বিষ্ঠায়
তবু সে নিয়তিকে লেজের চাঁটি মারে
অপার নিষ্ঠায়
জানালা খুলে ব’সে প্রায়শ রাতে দেখি
আকাশে দল বেঁধে মেঘেরা খেলা করে
হা-করা কালো তিমি চাঁদকে গিলে খায়
আঁধার পেট ফুঁড়ে তবুও প্রাণপণে
জোছনা ঝলকায়
নিবিড় চাষী জানে মাটির কোপনতা
কতটা আড়চোখে তাকায় ব্যর্থতা
ফসল খেয়ে ফেলে খরা ও বন্যায়
খনাও বলেনি তো প্রকৃতি নিজে করে
এতটা অন্যায়
কিছুটা নিজে জানি বাকিটা মহাকাল
দেয়ালে নোনা ধরে টেকে না জলরঙ
(অজর পদাবলি বলে তো কিছু নাই)
অন্ধ তুলি দিয়ে কালের ক্যানভাসে
তবুও আঁচড়াই
ঘোর কেটে গেলে
Thursday, May 17, 2018, 11:53 PM
হয়তো এখনও আছি অর্ধস্ফুট গোলাপের মতো--
বোঝেনি শরীর-সত্তা কাকে বলে পূর্ণ জাগরণ;
দরিদ্র ইন্দ্রিয়গুলো চিনেছে যে বস্তুবাস্তবতা
কখনও জাগ্রত হলে চিনে নিতো আরেক জীবন।
যদি এ-রহস্যমালা কোনোদিন এই গূঢ় অন্তর্বাস খোলে
হয়তো দেখবো কিছু বর্গক্ষেত্র ঢুকে বসে আছে
অসংগত পৃথিবীর বেমক্কা বর্তুলে:
প্রকৃত রাজার কাঁধে গোলামের তকমা তুলে দিয়ে
গোলাম রাজত্ব করে জগদ্দল প্রভুত্বের পতাকা উড়িয়ে।
দিব্যদৃষ্টি খুলে গেলে তুমি দেখে নিয়ো
জীবন কামনা করে যা কেবল কবিদের প্রিয়;
মানুষের রিপাবলিকে প্লেটোদেরই প্রয়োজন নাই,
বহুকাল ভুল করে খাকিদের কুচকাওয়াজে বেজেছে শানাই।
কোনোদিন সত্যি সত্যি ঘোর কেটে গেলে
তোমারও সিঁথির নিচে দেখা যাবে নাগিনীর টিকা,
রূপের নিকেলে ঢেকে হীন কোপনতা ঘর করো কামার্ত চণ্ডিকা।
নারীর প্রতিমা গড়তে ঈশ্বরের মহামন্ত্রে হয়েছিলো ভুল:
উরু-নাভি-বুক আর মুখের লাবণ্য এঁকে সাত-তাড়াতাড়ি
পৃথিবীতে ছেড়েছেন মোহময়ী খড়ের পুতুল
(তখনও ভেতরে কিছু কুটো রয়ে গেছে!)
এবং এদেরই সঙ্গে আমাদের বহু ব্যর্থ রজনী কেটেছে।
এইসব অর্ধনারী পারে শুধু উস্কে দিতে
আলুথালু যৌবনের রুপালি বমন;
নারীর সান্নিধ্য দেবে আরো এক শুদ্ধ শিহরণ
বাৎসায়ন জানে না যা, আফ্রোদিতি আছেন আঁধারে--
এমন রমণী শুধু কবিরাই গড়ে নিতে পারে।
আমাকে বিশ্বাস করো কবিতার দিব্যি দিয়ে বলি:
সাক্ষী সেই কাহ্নু থেকে অধুনার এলো-পদাবলি:
শিল্পের জলাঙ্গী জুড়ে গুটিকয় রিক্ত পাতিহাঁস
যেন কিছু ডাঙার গুইসাপ অকথ্য উল্লাসে করি ব্যর্থ জলকেলি!
এসব বুঝবে তুমি
শাশ্বতীর সুকান্ত মরাল যদি কোনোদিন সত্যি ধরে ফেলি।
বস্তুর খোলসকেই ভেবে নিয়ে খণ্ড খণ্ড রূপের মহিমা
কেবল বাড়িয়ে চলি আরোপিত উপমা ও প্রতীকের সীমা;
হাজার বছরে তাই পেয়েছি কেবল কিছু প্রতিতুলনার কবি,
জন্মান্ধ শিল্পীর আঁকা এলোমেলো জীবনের ছবি।
আরেক ঈশ্বর চাই আমারই চৈতন্যজাত সত্য দিয়ে গড়া;
পৃথিবীতে গড়ে নেবো শব্দের অপ্সরী আর কথার অমরা।
প্রত্নরমণী
Thursday, May 17, 2018, 7:51 PM
তোমাকে দেখেনি মধ্যযুগের নিপুণ পটুয়া,
অজন্তা কিবা ইলোরার ভাস্কর--
তাহলে দেখতে শত ক্যানভাসে,
ব্রোঞ্জে-পিতলে কষ্টিপাথরে,
টেরাকোটা-কাঠ-সোনার পুতুলে
তুমি সাজিয়েছো পুরাকীর্তির সবগুলো যাদুঘর!
কৃষ্ণের পাশে যে আছে দাঁড়িয়ে
যৌবনবতী পাথুরে-স্তনের নারী
লজ্জায় ভেঙে খান খান হবে
তুমি যদি শুধু একটু সাহসে
জোড়ামূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে
খুলে ফেলো এই শাড়ি!
তোমাকে মানাতো প্রত্নবেদীতে পঞ্চালিকায়
গোপীচন্দনে তিলক পরালে বৈষ্ণব কবি,
কোলাহলময় বিশ-শতকের শেষপাদে কেন এলে?
নষ্ট কালের ভ্রষ্ট প্রেমিক
কী দিয়ে তোমার বন্দনা করি?
নারী-কীর্তনে ব্যবহৃত সব উপমা দিয়েছি ফেলে!
তোমাকে দেখেনি চিতোরের রাজা,
রূপের পূজারী রসিক রত্নসেন--
তাহলে দেখতে নিদারুণ ক্ষোভে
মিথ্যুক সেই হীরামন পাখি,
এমনকি প্রিয় পদ্মাবতীকে এক-শূলে চড়াতেন!
নর্তকী নও, তোমার চলার পথ জুড়ে তবু
প্রবাহিত তুমি নৃত্যের নানা মুদ্রায়:
দ্যভিঞ্চি আর হেনরী’র নারী
আমাদের প্রিয় রাজহংসীরা
তোমাকে দেখেই গ্রীবাভঙ্গির অসঙ্গতিকে শোধরায়।
তুমি চলে গেলে ঘর জুড়ে হাঁটে তোমার প্রতিমা,
সারা বাড়ি হয় পরাবাস্তব কোনারক ও খাজুরাহো:
সাজের টেবিলে-বিছানা-বালিশে,
ফাঁকা করিডোরে-বিরান হেঁসেলে
থেকে থেকে জলে ‘তুমি নেই’ এই সত্যের দাবদাহ।
ডুবে যেতে যেতে
Thursday, May 17, 2018, 11:15 PM
জলমগ্ন বাঙলাদেশ: নাকি এক ল্যাগব্যাগে তরল ড্রাগন
হিমালয় থেকে নেমে গিলেছে শস্যের মাঠ, বন-উপবন;
নিঝুম দ্বীপের মতো ভাসমান শুধু কিছু ক্লিন্ন লোকালয়
তাকেও জুজুর মতো লেলিহান জিহ্বা নেড়ে সে দেখায় ভয়,
তবুও জীবনছন্দে মুখরিত ব্যস্ত জনপদ
উজিয়ে সকল বাধা, পায়ে-পায়ে সমূহ বিপদ
যে-যার কর্তব্যে যায়; অজানা আতঙ্কে কাঁপে দুরু দুরু জননীর প্রাণ
কোমরে ঘুঙুর বেঁধে ছেড়ে দিয়ে হাঁটি-হাঁটি কোলের সন্তান:
শব্দ শুনে বুঝে নেয় নানা কাজে ব্যস্ত প্রিয়জন
কতদূর হেঁটে গেলো দুষ্টুমতি তাদের খোকন।
* * *
নুনুর কাছে ঘণ্টি নড়ে,
সাধ্যি কী যে খোকনসোনা খন্দে পড়ে!
ভুবন জুড়ে বাজছে যেন একটিই সুর, একটি শুধু গান,
ধ্যানীর মতো সারাটা বাড়ি শুনছে পেতে কান।
* * *
তাহলে কি উৎকন্ঠিত আমারও জননী কিংবা বুবু ও দাদীমা
এভাবেই এঁকে দিতো এ আমার গন্তব্যের সীমা?
* * *
হয়তো সে শব্দময় অস্তিত্বের সীমানা পেরিয়ে নিঃশব্দেই জানি না কখন প’ড়ে গেছি বিকট পাতালে; চারপাশে খানাখন্দ: উপদংশ-কবলিত স্বৈরিণীর সুবর্ণ ব-দ্বীপে কাদা, আমাকে লোভায় তার সুগভীর ব্যক্তিগত খাড়ি; বিষম হা-করে থাকে পানপাত্র; বন্ধুর বাড়িয়ে-দেয়া অমসৃণ বাঁকা করতল, দ্রাবিড়ীয় কিশোরীর গালে-পড়া টোল আর চটুল হাসিতে খুব ফেটে-পড়া প্রেমিকার মুখের ব্যাদানকেও আজকাল বড় কোনো গর্ত মনে হয়--ক্রুর জল পাক খায় লাভার দাপটে; উন্মাতাল ঘূর্ণিজলে সুবোধ কুটোর মতো ভাসি-ডুবি বিবিধ মুদ্রায়...চুমুকে চুমুকে ডুবি...চুমুতে চুমুতে; নগরীর নানাস্থানে বিপদ-সরণি, মেয়রের পেতে-রাখা অ্যাশফল্টের চোরাবালি আমাকে ডোবায়।
‘আপদে ভরসা প্রাপ্তি’ এমন অভয়বাণী লেখেনি ঠিকুজি
অতল পাতালে তবু ডুবে যেতে যেতে প্রায়শ কী যেন খুঁজি;
পরাস্বপ্নে কেঁদে ওঠে আজও কিছু প্রত্যাশার ক্ষীয়মাণ রেশ.
ঘুঙুর বাজাবো বলে হাতড়ে ফিরি কোমরের বিভিন্ন প্রদেশ!
সমগ্র কোথায় তুমি?
Friday, May 18, 2018, 4:45 AM
সমগ্র কোথায় তুমি? আর্তস্বরে ডাকি যতবার
দূর থেকে সাড়া দেয় অতীন্দ্রিয় কে এক আঁধার!
খণ্ডের যোগফল থেকে বহুদূরে সমগ্রের বাড়ি
জেনেও খণ্ডাংশগুলো জোড়া দিই যতটুকু পারি।
প্রতিটি গন্তব্য তার কিছু চিহ্ন এঁকে রাখে পথের ওপর,
হিজিবিজি সেইসব জটিল জ্যামিতি থেকে সমগ্রের ঘর
খুঁজতে গিয়ে মনে হলো আমি এক
সদ্যোজাত শিশুর মতন
মা বলতে যে বোঝে শুধু উষ্ণ দুই গোলাকার স্তন।
কখনোবা চোখে মেখে বিপুল বিস্ময়
তাকায় মায়ের মুখে, সে-মুহূর্তে তাকে মনে হয়
প্রকৃত সন্তের মতো, ধ্যানমগ্ন গিলে খায় সোহাগের ধ্বনি,
প্রবল বিশ্বাসে তার ক্ষুদ্র চোখ বলে ওঠে: এইতো মা-মণি!
ক্রমে ক্রমে চেনে তাকে সান্নিধ্যের গাঢ় উষ্ণতায়,
অবশেষে উন্মোচিত নিজস্ব নারীর মতো বাবার শয্যায়:
মূলত রমণী তিনি--পরিমেয় উরু-বুক-জরায়ু-জঘনে
তবুও জননী থাকে চিরদিন দেবীতুল্য সন্তানের মনে।
সমগ্র কোথায় তুমি? ডাকতে ডাকতে বেলা চলে যায়,
এমনকি তত্ত্বযোগী সাধুবাবা ঘুরেফিরে হাজার দরগায়
কখনো পাননি কিছু, বললেন: আজীবন সমগ্রকে খুঁজে
আমিও করেছি জড়ো নানা-রঙা চতুর্ভুজ,
মিশিয়েছি গোলকে-ত্রিভুজে
(বলেই মেললেন তিনি বহুবর্ণ তালি-মারা গায়ের গিলাপ)
আমারও অন্বিষ্ট ছিলো ভবের দারুণ শীতে ভবানীর তাপ,
তবু দ্যাখ্! এ-ও শুধু তালির যোগফল, স্বরচিত মলিন ময়ূর!
পেখম মেলতে হলে যেতে হবে আরো বহুদুর....
বিচূর্ণিভূত স্বপ্নের ছাই
Friday, May 18, 2018, 4:57 AM
কী করে বলবো ভুলে গেছি সব
সঞ্চয়ে আর স্মৃতির কণাও নাই--
এখনও তো এই ধূসর মগজে
বিচূর্ণিভূত স্বপ্নের ছাই ঝড় তোলে প্রতিদিন।
ভেবে খুব হাসি পায়:
নাগিনীর গ্রাসে অর্ধবিলীন ব্যাঙ যেন আমি কেউ
আর্দ্র করুণ অন্তিম ডাকে জীবনকে ভেংচাই।
মরণের আগে এমনি ক’দিন
বাঁকা হেসেছিলো অমলের বউ
গভীর নিশীথে ডাক দিতো যাকে কদমের ডাল--
দড়ি হাতে নিয়ে জোনাকির ভিড়ে
বিভোর দাঁড়িয়ে সাত-পাঁচ ভেবে
সম্বিতে ফিরে চমকে দেখতো আরেক সকাল!
ফেরাতো কে তাকে?
ঝিঁঝির কান্না নাকি জোনাকির প্রদীপ্ত আহ্বান:
হয়তোবা শত গঞ্জনাতেও পেয়েছিলো কিছু সুখ,
বিড়ালীর মতো চুক চুক ক’রে
চেখেছিলো সেও স্বামীর সোহাগ--
হয়তো দেখেছে সিনেমা-নাটকে,
পড়েছে গল্পে-উপন্যাসেও
মরণার্থীকে ফিরিয়ে এনেছে প্রাপ্তির দায়ভাগ।
জৈবনিকতা
Friday, May 18, 2018, 5:33 AM
অনেক দেখেছি পাঁকাল-বিলাসী কাদাজলে রাজহাঁস,
মসৃণ পাখা রেশমখচিত ছোঁয় না পঙ্কিলতা!
অথবা আমার বালকবেলার মোহময়ী মেথরানী
রূপের ছটায় ভুলে গেছি তার গুয়ের রাজ্যে বাস।
পট্টি যখন বাঙলা মদের উৎসবে গোলজার
সে তখন ছিলো পট্টরানীর আসনে অধিষ্ঠিত―
ঘাগড়ায়-লাগা শুদ্র অথবা ভদ্রপাড়ার মল;
“লছমী নাকি রে!” কুশল শুধাতো তবু খোদ জমিদার।
কাদায় পদ্ম, চাঁদে কলঙ্ক এ-কথা এখন ক্লিশে,
ময়ূর নিজে কি পেখম গোটায় বিশ্রী পায়ের খেদে?
রূপের দোহাই শুচিবায় ছেড়ে জৈবনিকতা শেখো―
খ্যাতিমান বহু কবিও ভুগেছে উপদংশের বিষে।
নূহ নবীর কাছে একটি সওয়াল
Thursday, May 17, 2018, 8:38 PM
আপনিও আল্লা’র নবী, মানব কল্যাণহেতু প্রেরিত পুরুষ--
যতক্ষণ এই দেহে প্রাণ আছে, না-হারাই হুঁশ
আপনার মর্যাদাহানি করতে পারি নই আমি তেমন মুরতাদ,
একটি শুধু সওয়ালের জওয়াব জানতে জাগে বড়ো সাধ।
এজতেহাদে সত্য মিলে বলেছেন স্বয়ং মা’বুদ--
রুহের কন্দর থেকে অহরহ ওঠে তাই প্রশ্নের বুদবুদ।
সেই কবে পৃথিবীতে এসেছিলো গজবের বান,
আপনার কিস্তিতে শুধু ঠাঁই পেয়েছিলো কিছু সাধু পুণ্যবান
নরনারী, পশুপাখি, এর সাথে বৃক্ষাদি ও ফসলের বীজ,
নতুন পৃথিবী গড়তে যা কিছুর প্রয়োজন ইত্যাকার চিজ।
পবিত্র মাটিতে ফের জেগেছিলো অনাবিল জীবন-স্পন্দন,
পুণ্যবান মানুষেরা চুষেছিলো সতীসাধ্বী পৃথিবীর স্তন।
তাহলে কী করে সেই বিমল ঔরস আর পবিত্র জরায়ু
জালেমের জন্ম দিলো, দুনিয়াতে দুষ্টচক্র পেলো পরমায়ু?
ভয় হয় ফের যদি অনুরূপ বান আসে এই পৃথিবীতে
পুণ্যাত্মাকে জলে ফেলে ওরা নিজে ঠাঁই নেবে কালের কিস্তিতে!
১৪০০ সাল
Thursday, May 17, 2018, 11:47 PM
আজ ভোরে সূর্য নয়
দিগন্ত রাঙালো নিজে রবীন্দ্র ঠাকুর:
শ্মশ্রুময় দেবকান্তি, অমিতাভ চিবুকের নূর
ছড়ালো রৌদ্রের মতো
যেন এই অপ্রাকৃত আকাশের নীল
লক্ষকোটি জাগর জোনাকি নিয়ে
করে ঝিলমিল!
প্রশ্নচিহ্ন হয়ে জ্বলে চেতনার গভীর ভেতরে--
“কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
কৌতূহল ভরে?”
দিগন্তে তাকিয়ে দেখি
ফ্যালফ্যাল চেয়ে আছে মহান কাঙাল--
কেঁপে ওঠে ইতস্তত ভ্রষ্ট মহাকাল।
গীতাঞ্জলি হাতে নিই ঝেড়েমুছে ধুলা:
হঠাৎ পালাতে গিয়ে লজ্জা পেলো
গুটিকয় কালের আরশুলা।
আমি কার খালু
Friday, May 18, 2018, 6:28 AM
ধীরে ধীরে হাট ভাঙছে,
অন্ধকার টেনে ধরছে দিগন্তের ফিকে লালসালু--
ডেকেছি বিস্তর তবু কেউ এসে বলে নাই আমি কার খালু!
উল্লোল বাজারি শব্দে ডুবে গেছে হার্দ্য এই ডাক,
বিপণি বিতান থেকে মাছের মহাল, মায় অন্ধগলি ঘুরেছি বেবাক;
কানফাটা শোরগোলেও কেউ কিছু ভোলে নাই কার কী ভূমিকা:
লাভ বুঝে দর হাঁকে বিক্রেতারা,
ক্রেতা কেনে দেখে দেখে ফর্দে কী কী লিখা।
দুরস্ত সাহেব-সুবো, মলিন ভিখিরি থেকে উলঙ্গ টোকাই
এ-হাটে সবাই ব্যস্ত--আমি শুধু দিগ্ভ্রান্ত কিছু মনে নাই
কী করতে এসেছি আর হারিয়েছে কাকে নাকি নিজেকেই খুঁজি!
ছিলো কি আমার কোনো ঠিকানা ও নিজস্ব ঠিকুজি?
জানিও না এই হাটে কে আছেন এমন দয়ালু
আমাকে যাবার আগে ঠিকঠাক বলে দেবে আমি কার খালু!
ফল্গুধারা নীরবে বয়
Friday, May 18, 2018, 6:28 AM
স্রোতে তোমার জন্ম, তুমি স্রোতেই হবে লীন;
ফল্গুধারা নীরবে বয় সাড়াশব্দহীন।
হাট বসালে ক্রেতাও জোটে, খৈ ছিটালে পাখি;
নির্মাতাই জানে কেবল পণ্যে কত ফাঁকি!
কালের ডামাডোলের ফাঁকে চক্ষে দিয়ে ধুলো
ভাবছো তুমি গানের সাথে বিকাবে শোরগোলও?
প্রাত্যহিকে রঙ মাখিয়ে শাশ্বতকে জয়
করাও যাবে--জানতে হবে রঙের পরিচয়।
কোথায় তুমি জানলা খোলো আদপে নাই ঘর;
যুগ চেনো না কী করে তবে আনো যুগান্তর?
স্রোতে তোমার জন্ম, তুমি স্রোতেই হবে লীন;
ফল্গুধারা নীরবে বয় সাড়াশব্দহীন।
উত্তরাধুনিক বৃষ্টিপাত
Thursday, May 17, 2018, 11:17 PM
পরাবাস্তব বৃষ্টিতে ভেজে বগলের বর্ষাতি--
শুকনো আষাঢ়, মিছে গর্জায় আকাশের কালো হাতি;
কখনো ধূসর নীলিমায় শু’য়ে গর্ভিনী কোনো মোষ
হতাশার মতো প্রসব করছে সাদা-সাদা খরগোশ!
এ-আষাঢ় যাবে সাদাকালো আর নীলের কোলাজ দেখে?
বর্ষাসংখ্যা সাময়িকী জুড়ে মেঘের পদ্য লে’খে?
ঈশানের দিকে চেয়ে দেখি যেই জমছে সম্ভাবনা
‘বৃষ্টি হবে না’ ঘোষণায় বলে ঢাকা বেতারের খনা।
অবচেতনের কোথায় তবুও কদমের ঘ্রাণ পাই:
অলীক জলের শিহরণে কাঁপে করিডোরে বনসাই--
স্মৃতির ভেতরে পাঠশালা ভেজে, থকথকে বইখাতা;
আমি আর সাজু--মাথার উপরে যৌথ কলার পাতা।
ভেজা কিশোরীর শরীরের ঘ্রাণে সম্বিতে ফিরে দেখি
চৈত্রের মতো গদ্যরমণী চোখ ঠারে তার মেকি।
বৃথা শৃঙ্গারে শরীর কাঁপিয়ে শুয়ে পড়ি নিজ খাটে,
কামনার জলে “বঁধুয়া ভিজিছে দেখিয়া পরান ফাটে...”
করাতকলের শব্দেরা বোনে বর্ষাধুমল রাত--
আগামী শাওন বৃথা যাবে না তো, হবে কি বৃষ্টিপাত?
বাইশের লাল ঘোড়া
Thursday, May 17, 2018, 6:08 PM
মানতের মতো রেখে যায় কারা যার যার প্রিয় ফুল,
পাপড়ির সাথে মাধুরী মেশানো নানা বর্ণের তোড়া:
শহীদ মিনার নিমেষেই দেখে ফাঁকা তার বেদীমূল
একুশের ফুল খেয়ে চলে যায় বাইশের লাল ঘোড়া!
হঠাৎ কখনো জাবরের পরে উৎকট ক্ষেপে ওঠে:
খুঁজে ফেরে তার মৌসুমী মেনু রক্ত-মাখানো জল,
নগর দাপিয়ে পাগলের প্রায় উড়–ক্কু পায়ে ছোটে
পিছে ফেলে আসে গণভবনের নিকানো আস্তাবল।
হায়েনার মতো হিংস্র দু’চোখ, কেশর ফুলানো ঘাড়,
গগনচুম্বী দালানের চেয়ে উঁচুতে নাড়ায় কান;
খুরের দাপটে রাজপথে ওঠে মিছিলের হাহাকার,
নড়ে ওঠে কাঁচা টিনশেড থেকে ইটের দরদালান।
যবনিকাহীন ধারাবাহিকের চরিত্রগুলো আজও
অসি ঝলকিয়ে অভিষেক করে ক্ষুধিত সরফরাজ
মারে কত রাজা, উজির-নাজির, মরে যায় মহারাজও;
বেঁচে থাকে শুধু রাজকুমারের সাধের পক্ষীরাজ!
অভিযাত্রীর খেরোখাতা
Thursday, May 17, 2018, 6:07 PM
দেখে নিয়ো এই মাতাল তরণি
হারাবে না কোনো অপকুয়াশার ঘোরে:
অবচেতনের গহীনেও দেখি প্রোজ্জ্বল বাতিঘর!
ঘূর্ণির মহাসমুদ্রে ঘুরে-ঘুরে
অবশেষে ঠিকই পেয়ে যাবে বন্দর।
বাঁধা বৃত্তের পরিধি পেরোয় কেন্দ্রাপসারী ঘোড়া
অসম্ভবের দড়ি ছেঁড়ে তবু সরল রেখায় ছোটে,
এলোমেলো কিছু ডিগবাজি আর দুলকির নামও চাল;
আপাত বেতাল ভাঁড়ের তামাশা অর্থের পায়ে লোটে।
কালোয়াত, তুমি কতদূর যাবে কেন্দ্র তোমাকে টানে!
বৃত্তাবদ্ধ জীবনের কিছু হলো কি সম্প্রসার?
প্রবীণ ব্যাঙমা ছানি-পড়া চোখে বিস্ময়ে চেয়ে দেখে:
নবীন পাখিরা চিরায়ত খড়ে গড়ে আজও সংসার।
সুন্দরালি’র যৌথ অবচেতন
Friday, May 18, 2018, 4:35 AM
পউষের ঘাসে পরীর পেসাব !
বাতাস ধরেছে বরফের ভাব,
ফাটা পায়ে হেঁটে হাল নিয়ে যায় ক্ষিপ্ত সুন্দরালি―
বিগত রাতের ব্যর্থতা ভাবে:
কী যেন কীসব দেখেছিলো খা’বে,
পাঁচন উঁচিয়ে বিড়বিড় করে গাইটাকে দেয় গালি:
বাঁয়ে ক’লে দেহি ডানমুহি যাস,
মইত্যার মা’র দেমাগ দেহাস,
হেট হেট হট, সিধা অ’য়া চল্, ফাডায়া ফালামু বেডি;
মেয়া-মানুষের মন বোঝা ভার
দরদ বোঝে না দিল-কলিজার
পরান দিলেও ফুঁস মারে য্যানো মনুমোড়লের জেডি !
হায়রে কপাল ! দোষ ধরি কার,
একবেলা ভাত, দুই বেলা মাড়,
মইত্যার পেডে যাই কিছু ঢোহে কিরমিরা খা’য়া ফ্যালে―
জমিনে ঢোহে না লাঙলের ফাল
মাডি য্যানো দেও-দানবের ছাল
বানে-ডোবা জমি তা-ও ভাসি’ ওডে মরশুম চলি’ গ্যালে।
একাত্তরের যুদ্ধ করিছি
দেশের জন্যি অস্ত্র ধরিছি
কান ভরি’ হুনি হগলে আমারে মুক্তিযোদ্ধা ডাহে !
চিল্লায় কারা ‘চেতনা চেতনা’
নেতায়া পড়িছে গোখরোর ফণা―
চেতনা খা’য়া কি কারো কোনোদিন পেড ভরে কও বাহে ?
কোথায় বাপু যাই
Friday, May 18, 2018, 4:22 AM
রুনুঝুনুর মেজোচাচা
এবং তাদের চাচী
আজকে যদি ঢাকায় তবে
কালকে থাকেন রাচী,
সিঙ্গাপুরে কাশেন তারা
কাশ্মীরে দেন হাঁচি।
বুক-পকেটে পাউন্ড-ডলার
ব্যাক-পকেটে দিনার,
মস্কো থেকে নাস্তা সেরে
লন্ডনে খান ডিনার।
জাপান ব’সে চা পান ক’রে
বলেন তুলে হাই:
এই পৃথিবী এত্তো ছোট,
কোথায় বাপু যাই!
অ্যাকুরিয়াম
Friday, May 18, 2018, 4:21 AM
জলেই থাকি কিন্তু তবু মাছের থেকে দূরে
ঘর বেঁধেছি স্বচ্ছ বালি, জলজ ক্যাকটাসে;
রুই-কাতল ও টাকির মেকি ফেনানো বুদ্বুদে
মন মজেনি, ঘুচাতে চাই মীনের পরিচয়।
আমার ঘরে নৈশব্দ্যও শব্দ থেকে দামী:
ফ্রাই উপমা, সিদ্ধ ধ্বনি, কল্পনা চচ্চরি,
প্রতীক-পরাস্বপ্নে চলে অলীক খাওয়া-দাওয়া;
যুগান্তরের পোশাক প’রে ঢুকছে যুগের হাওয়া!
আমার ঘরে আসলে তুমি পেরিয়ে কাচের বাধা
দেখতে পাবে তেজস্ক্রিয় শাশ্বত এক নুড়ি,
সান্দ্র আলোর ফিনকি দিয়ে সত্য করে ফেরি,
একটু ছুঁ’লেই ছলকে ওঠে সমুদ্র-কল্লোলও।
যুগের তালে কানকো নাড়ে তিন-পাখার এক মাছ
পটভূমি স্বচ্ছ বালি, জলজ ক্যাকটাস...
যা তুই ফিরে যা পাখি
Friday, May 18, 2018, 4:21 AM
আমার ডাকনাম ধরে ডেকে ওঠে সুদূরের পাখি
অমর্ত্য যমজ ভগ্নি সে আমার কালো সহোদরা
জন্মলগ্নে এই হাতে বেঁধে দিয়ে রাখী
অচেনা সুদূর কোন্ মায়ালোকে উড়ে গেছে অনঙ্গ অধরা।
আমি একা বেড়ে উঠি রূপে-রসে মত্ত যুবরাজ
পেরিয়ে মায়ের স্নেহ, লালচক্ষু পিতার শাসন
স্বরচিত সংবিধানে গড়ে নিয়ে রঙিন স্বরাজ
একে একে জয় করি যৌবনের গন্ধে-ভরা দারুচিনি বন।
খেয়েছি নারীর মধু, এর চেয়ে বেশি তার ছলনার বিষ;
মধ্যবিত্ত মনে গেঁথে স্বামীত্বের বিপুল ব্যর্থতা
সুখের বিবর্ণ মুখে সাধ্যমতো মেরেছি পালিশ,
দুঃখকে নিয়েছি মেনে অনিবার্য রূঢ় বাস্তবতা।
এর মানে বলতে হবে সুখে-দুখে জীবন সুন্দর:
কুষ্ঠরোগী হেসে ওঠে মিষ্টি কোনো স্মৃতির জোছনায়,
নুলো ও ঠুঁটোর নারী সন্ততিতে ভরে তোলে পল্লবের ঘর;
কামরুলের কিষানীরা নিরিবিলি বিলি কাটে চুলের বন্যায়।
যা তুই ফিরে যা পাখি, কালো পাখি, এখন যাবো না--
আগে তো দু’হাত ভরে জীবনের লুটে নিই সোনা!
Comments
Post a Comment